“এই বাজেট প্রণয়নে আমি সরকারের আন্তরিকতার পরিচয় পেয়েছি,” বলেন রওশন।
প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে জাতীয় পার্টির একাংশের সভাপতি রওশন এরশাদ ‘ইতিবাচক’ মনোভাব দেখানোর পক্ষে অবস্থান নিলেও তার অনুসারী দলটির নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ সরকারের সামনে অনেক ‘সংকট’ দেখছেন।
শনিবার ঢাকার গুলশানে রওশন এরশাদের বাসভবনে দলটির প্রেসিডিয়ামের প্রথম বৈঠক হয়, যেখানে সূচনা বক্তব্য দিচ্ছিলেন তিনি। আর বৈঠকের পর বাজেট নিয়ে দলের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন ফিরোজ রশিদ।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। দুদিন পর এ বিষয়ে রওশনপন্থি জাতীয় পার্টির বক্তব্য এল।
বৈঠকের শুরুতে গত সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, “এটি এ যাবৎ কালের মধ্যে সর্ববৃহৎ বাজেট। একে আমরা ‘ইতিবাচক’ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে চাই। দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বাজেটের আয়তন বড় করতেই হবে। হয়ত আগামীতে আমরা আরও বড় বাজেট দেখতে পাব।
“আমরা বিরোধী অবস্থানে আছি বলেই বিরোধিতার স্বার্থে একটা জাতীয় বাজেট পেশ হওয়ার পর তার বিরোধিতা করতে হবে- এ নীতিতে আমরা বিশ্বাসী নই। আমি বিশ্বাস করি, কোনো সরকারই দেশ ও জনগণের স্বার্থের পরিপন্থি কোনো বাজেট প্রণয়ন করে না। দেখতে হবে প্রণীত বাজেট বাস্তবায়নে সরকার দক্ষতার পরিচয় দিতে পারে কি না।”
বাজেটের সফল বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ থেকে যে কোনো জাতীয় সমস্যা সম্মিলিতভাবে মোকাবেলায় সরকারের পাশে থাকার কথা বলেন রওশন।
“এই বাজেট প্রণয়নে আমি সরকারের আন্তরিকতার পরিচয় পেয়েছি। এর সফল বাস্তবায়ন হোক- আমরা সেটাই আশা করব। দেশ ও জনস্বার্থের কথা চিন্তা করে বাজেট বাস্তবায়নে আমাদের পরামর্শ সরকারের কাছে তুলে ধরব। আমরা জানি, বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রয়েছে। আমরাও সেই সমস্যা ভোগ করছি।
“দেশে ঘুষ-দুর্নীতি, বেকারত্ব, স্বাস্থ্যসেবা সমস্যা এবং পরিবেশগত বিপর্যয়ের মুখোমুখি আমাদের হতে হচ্ছে। এসব সমস্যা সম্মিলিতভাবে মোকাবেলা করতে হবে। যে কোনো জাতীয় সমস্যা সমাধানের জন্য সাহায্য চাইলে আমরা অবশ্যই আমাদের সাধ্যমতো সহযোগিতা করব।”
‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা ’
বাজেট নিয়ে ইতিবাচক রওশনের বক্তব্যের মিল পাওয়া গেল না দলটির আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে। প্রেসিডিয়ামের বৈঠক শেষে দলের পক্ষে কথা বলেন নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ।
তিনি বলেন, “প্রস্তাবিত বাজেট শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা। দেশের সত্যিকারের অর্থনৈতিক চিত্রকে ঢাকার প্রবণতা রয়েছে এবারের বাজেটে।”
খেলাপি ঋণ, অর্থপাচার, মূল্যস্ফীতি, শেয়ারবাজার এবং বাজার সিন্ডিকেট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে এসব নিয়ে কথা বলার জন্য দেশে সত্যিকারের বিরোধী দলের অভাবের প্রসঙ্গ তোলেন ফিরোজ রশিদ।
“দেশে সত্যিকারের বিরোধী দল না থাকলে, সাধারণ মানুষের পক্ষে কথা বলার প্রতিনিধিত্বের অভাব দেখা দেয়। যে কাজ বিরোধী দলগুলোর করার কথা, তা কখনও কখনও সরকারি দলের সদস্যদের করতে দেখা যায়।
“ঋণের চাপে ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। আর সরকার অনুৎপাদন খাতের জন্য সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিচ্ছে। সে কারণে আগামীতে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।”
বৈঠকে কাজী মামুনূর রশিদ, কো-চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার মিলন, সুনীল শুভ রায়, জিয়াউল হক মৃধা, রফিকুল হক হাফিজ, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মিলন, ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, কারী হাবিবুল্লাহ বেলালী, আবুল কাশেম সরকার, শফিকুল ইসলাম শফিক, আমানত হোসেন আমানত, এইচএনএম শফিকুর রহমান, নুরুল ইসলাম নুরু, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, আব্দুল গাফফার বিশ্বাস, খন্দকার মনিরুজ্জামান টিটু, এমএ কুদ্দুস খান, ইয়াহ্ ইয়া চৌধুরী ও শংকর পাল উপস্থিত ছিলেন।