বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনার তোপ ছোড়েন।
জনগণের টাকা লুটপাট ও ব্যাংকে অনিয়মের অভিযোগে সংসদে সরব হয়েছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সদস্যরা।
তারা ‘পাচার হওয়া অর্থ’ ফেরাতে উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি ‘পাচারকারীদের চিহ্নিত করার’ জোরালো দাবি তুলেছেন।
আর্থিক খাতে ‘অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা’ বন্ধ করে এ বিষয়ে সরকারকে কঠোর হওয়ার দাবি জানান তারা।
বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের মঞ্জুরি দাবির ওপর ‘ছাঁটাই প্রস্তাবের’ আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনার তোপ ছোড়েন।
জবাব দিতে দাঁড়িয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এগুলোকে অনেকটা ‘ঢালাও অভিযোগ’ আখ্যা দিয়ে এসব বিষয়ে তারা ‘চেষ্টা করে যাচ্ছেন’ বলে সংসদকে অবহিত করেন।
সম্পূরক বাজেটে ২০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মঞ্জুরি দাবির ওপর ৬৬টি ছাঁটাই প্রস্তাব দেওয়া হলেও আলোচনা হয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রস্তাবগুলো নিয়ে। অন্য প্রস্তাবগুলো আলোচনা ছাড়াই ভোটে দেন স্পিকার।
তবে ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আর্থিক বিভাগের অনিয়মের প্রতিবাদ হিসেবে তিনি ‘ছাঁটাই প্রস্তাব’ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের বড় কাজ ব্যাংকিং খাতকে তদারকি করা। কিন্তু জনগণের টাকা লুটপাট হচ্ছে, ব্যাংকে অনিয়ম হচ্ছে- আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বা বাংলাদেশ ব্যাংক কি তা তদারকি করছে?
“পিকে হালদার কয়েক হাজার কোটি নিয়ে চলে গেছেন, বিভিন্ন সময় বড় বড় প্রতিষ্ঠান ঋণ নেয়; পরে তাদের সুদ মওকুফ করা হয়, এসবের জবাব কি অর্থমন্ত্রী দিতে পারবেন?”
তিনি বলেন, “২ হাজার ২০০ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করা হয়েছে অথচ ৫০ হাজার টাকার জন্য কৃষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর্থিক খাতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে এখানে টাকা খরচ করা কেন? চুপ থাকাই ভালো।”
চুন্নু বলেন, ডলার সংকটের বড় কারণ পাচার। আগের অর্থমন্ত্রী এ বিষয়ে কিছুই শুনতে চাইতেন না।
আর্থিক খাতে অনিয়ম বন্ধের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, আমলা যেই হোন যারা বিদেশে টাকা পাচার করেছেন, কানাডা, ইউরোপ আমেরিকায় বাড়ি, হোটেল করেছেন তদন্ত করে তাদের চিহ্নিত করা হোক। টাকা ফেরত আনতে না পারলেও তাদের চিহ্নিত করা হোক।
স্বতন্ত্র সদস্য পংকজ নাথ বলেন, দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে। এ বিষয়ে কঠোর হতে হবে। ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এলসি খোলার ক্ষেত্রে ‘সংযত নীতি’ পরিহার করে আরও উদার হওয়া দরকার। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা জরুরি।
আরেক স্বতন্ত্র সদস্য হামিদুল হক খন্দকার বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কেন অতিরিক্ত মঞ্জুরি দাবি করেছে তার সুষ্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। অতীতে আরাফাত রহমান কোকোর পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। দেশে লুটপাট করে যারা অর্থপাচার করেছেন, তাদের সে অর্থ ফিরিয়ে আনা হবে বলে আশা করছি।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে অনিয়মের অভিযোগ
আইসিটি বিভাগের ‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং’ প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে চলছে কি না, তার খবর নেওয়ার দাবি জানিয়ে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, এ প্রকল্পে যারা লার্নিং করতে আসেন তারা সঠিকভাবে আত্মস্থ করতে পারেন না; এখানে অপব্যয় হচ্ছে।
পংকজ নাথ বলেন, আইসিটি খাতে কাজ যে হচ্ছে না, তা ঠিক নয়। তবে ‘দোয়েলের বাক্স’ খুললে যদি চায়নিজ কম্পিউটার পাওয়া, তবে এটা কি অপচয় না কি দুর্নীতি? এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থাটা কী নিয়েছেন, তা সংসদ জানতে চায়।
তিনি বলেন, ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব’ এর নামে যে কম্পিউটার দিয়েছেন, তাতে কি আদৌ কাজ হচ্ছে না কি জং ধরে গেছে? ডাক বিভাগের আধুনিকায়নের নামে দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে। ডাক বিভাগের জমির অবস্থা কী সংসদ তা জানতে চায়।